কোন কোন সবজি গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর
ভূমিকা০১
গর্ভকালীন সময় কেবল মায়ের জন্যই নয়, গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতেও একটি
সঠিক, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যতালিকা অবলম্বন করা অপরিহার্য। এই সময় কিছু
নির্দিষ্ট সবজি যদি অনাচ্ছিক বা অজানামতে খেয়ে ফেলেন তাহলে তা গর্ভপাত, পেটে
ব্যথা বা সংক্রমণ, এমনকি জন্মগত জটিলতা ডেকে আনতে পারে।
তাই আজকে আমরা আলোচনা করব: কোন কোন সবজি গর্ভাবস্থায় নিরাপদ নয় এবং কেন?
সূচিপত্র
কোন কোন সবজি এড়িয়ে চলবেন?০২
কাঁচা বা অর্ধপাকা পেঁপে (Papaya)
গর্ভাবস্থায় কাঁচা বা আধপাকা পেঁপে খাওয়া থেকে দূরে থাকা উচিত, কারণ এতে
থাকা ল্যাটেক্স ও প্যাপেইন এনজাইম জরায়ু সংকোচন ঘটাতে পারে—যাতে গর্ভপাত বা
অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়তে পারে । অন্যদিকে, সম্পূর্ণরূপে
পাকা পেঁপে ভিটামিন এ, সি, ফোলেট, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ,
যা হজম ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে এটি পরিমাণমতো এবং
সতর্কতার সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে।
অঙ্কুরিত বা সবুজ আলু
গর্ভবস্থায় অঙ্কুরিত বা সবুজ আলু এড়িয়ে চলাই ভালো, কারণ এতে সোলানিন ও
ক্যাকোনিন গ্লাইকো‑অ্যালকালয়েড নামে বিষাক্ত যৌগ উচ্চ মাত্রায় থাকে, যা
অজ্ঞানতা, বিভ্রান্তি, বমি, ডায়রিয়া ও তীব্র পেটব্যথার মতো ক্ষতিকর
প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে ।
এছাড়াও, এই আলু গর্ভবতী ও শিশুদের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক, কারণ শক্তির
ঘাটতি বা বিলম্বিত প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে বিষক্রিয়া দ্রুত গুরুতর আকার নিতে
পারে । তাই গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণ পরিহার করাই নিরাপদ সিদ্ধান্ত।
কাঁচা স্প্রাউটস (যেমন মুগ ডাল, আলফালফা)
গর্ভবস্থায় কাঁচা স্প্রাউটস, যেমন মুগ ডাল বা আলফালফা, এড়িয়ে চলাই নিরাপদ,
কারণ এগুলো ই. কোলাই, সালমোনেলা বা লিস্টেরিয়া–র মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার
জন্মস্থান হতে পারে জীর্ণতর, উষ্ণ এবং আর্দ্র পরিবেশ এই জীবাণুগুলিকে দ্রুত
বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করে।
এই ব্যাকটেরিয়াগুলি গর্ভবতী নারীদের সংক্রমণ, পেটব্যথা, ডায়রিয়া, বমি
ইত্যাদি ঝুঁকি বাড়ায় এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ফলে, স্প্রাউটস অবশ্যই সম্পূর্ণ রূপে রান্না করে খেতে হবে। কাঁচা খাওয়া যাবে
না।।
বেগুন
গর্ভস্থ অবস্থায় বেগুন অতিরিক্ত খাওয়া কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেগুনে থাকা ফাইটো‑হরমোন জরায়ুর সংকোচন বাড়িয়ে গর্ভপাত
বা অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এর পাশাপাশি, অনেকেই বেগুনে
অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা এবং অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া যেমন চুলকানি বা
র্যাশের মতো সমস্যা অনুভব করতে পারেন।
তাছাড়া, বেগুনের সোলানিন ও অক্সালেট উপাদান হজমজনিত অসুবিধা, ব্লোটিং বা
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা তৈরি করতে পারে, বিশেষত অতিরিক্ত মাত্রায়
সেবন করলে। তাই গর্ভবতী মহিলা অবশ্যই তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণে, ভালোভাবে ধুয়ে
ও রান্না করে বেগুন গ্রহণ করবেন এবং কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
টমেটো (কাঁচা অতিরিক্ত পরিমাণে)
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা টমেটো খাওয়া নিরাপদ হলেও কিছু কারণে সচেতন
থাকা জরুরী। টমেটোর উচ্চ অ্যাসিড প্রবণতা অ্যাসিডিটি এবং গ্যাস্ট্রিক অস্বস্তি
যেমন অম্বল, গ্যাস বা পেটব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।
আরও বেশি খেলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও হৃদরোগ–জাতীয় সমস্যাও হতে পারে ।
টমেটোয় থাকা অক্সালেটস উপাদান কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষভাবে
সংবেদনশীল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ।
তাছাড়া, টমেটোতে কীটনাশক ব্যবহার ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থাকলে সেগুলো
গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে । তাই, কাঁচা টমেটো ভালোভাবে ধুয়ে ও
পরিমিতভাবে খাওয়া উচিত, এক্ষেত্রে রান্না করে উপভোগ করাই শ্রেয়।
অতিরিক্ত ঝাল বা মসলা যুক্ত সবজি
ঝাল খাবার অনেক সময় অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক ও পেটের অস্বস্তি সৃষ্টি করে
গর্ভাবস্থায় এই ধরনের সমস্যা সহজেই বাড়তে পারে। তাই বেশি ঝাল সবজি এড়িয়ে চলাই
শ্রেয় ।
অ্যালোভেরা (ভিতরে থেকে খাওয়া)
গর্ভবস্থায় অ্যালোভেরার অভ্যন্তরীণ ব্যবহার এড়িয়ে চলাই নিরাপদ, কারণ এতে
উপস্থিত অ্যানথ্রাকুইনোন, অয়লিন ও এমোডিন এর মতো যৌগগুলি কাঠিন্যজনক প্রভাব
যেমন উপসর্গ সৃষ্টি করা, জরায়ু সংকোচন এবং গর্ভপাত বা অকাল প্রসবএর ঝুঁকি
বাড়াতে পারে ।
এগুলির প্রবল রেচক কার্যক্রমে ডায়রিয়া, ইলেক্ট্রোলাইট বৈষম্য ও ডিহাইড্রেশন
ঘটতে পারে, যা মা ও ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকর । এছাড়া, গবেষণায় দেখা গেছে
মৌখিকভাবে গৃহীত অ্যালোভেরা সমগ্র পাতা নির্যাস হেপাটাইটিস, কিডনি বা হার্টের
ক্ষতি এবং প্রজনন বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে । তাই, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া
গর্ভাবস্থায় অ্যালোভেরার অভ্যন্তরীণ ব্যবহার নিরাপদ নয়।
কাঁচা বা অপরিষ্কার শাকসবজি
না ধোয়া বা অপরিষ্কার শাকসবজিতে থাকতে পারে
Toxoplasma,
Listeria,
Salmonella—যা মা‑শিশু উভয়ের জন্যই
সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই সবজিগুলো ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করা উচিত
অতিরিক্ত পরিমাণে বেগুন বা অজানা শাক
যদি কোনো খাবারে প্রতি‑দিন একই ধরনের শাক অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়, তবে তা
পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে বা হজমের সমস্যা (যেমন গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য)
তৈরি করতে পারে
পূর্বে অ্যালার্জি প্রদর্শিত সবজি
যদি পূর্বে কোনো সবজিতে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়—যেমন বেগুন,
বরাবর—তাহলে গর্ভাবস্থায় সেটি একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে, ছোট‑খাট বা আখ্যান্ত
পরিমাণেও দিলে প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে
খাদ্য নিরাপত্তায় সাধারণ সতর্কতা০৩
- সব ধরনের ফল ও সবজি অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে; বিশেষত কাঁচা স্প্রাউটস সম্পূর্ণ রান্না না করলে এড়িয়ে চলতে হবে।
- প্রস্তুত বা প্যাকেটজাত সালাদ, রেডি‑টু‑ইট প্রোডাক্ট কিংবা দোকান থেকে তাজা সালাদ নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি ।
- সেইসাথে প্রসেসড বা অতিরিক্ত সংরক্ষিত সবজি/খাবার যেমন টিনজাত পণ্য থেকে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
সর্বোপরি পরামর্শ০৪
বৈচিত্র্যময় খাবার
প্রতিদিন ভিন্ন ধরনের সবজি খান, এক ধরনের সবজির ওপর নির্ভর করবেন না।
সতর্কতার সঙ্গে শাকসবজি নির্বাচন ও প্রস্তুত
আগে ভালোভাবে ধুয়ে, রান্না করুন—বিশেষ করে বাইরে বা দোকান থেকে নেওয়ার
ক্ষেত্রে।
অজানা বা নতুন সবজির পূর্বে পরামর্শ
তুন শাক বা সবজি খাওয়ার আগে গাইনি বা পুষ্টিবিদ-এর মতামত নিন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও হালকা খাবার গ্রহণ
বিশেষত গ্যাস, ডায়রিয়া বা এসিডিটি থাকলে।
অতিরিক্ত ঝাল, ভাজা বা টিনজাত খাবার
এগুলো শরীর ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য নিরাপদ নয়
উপসংহার০৫
গর্ভাবস্থায় খাদ্য নির্বাচন যতই সহজ মনে হোক না কেন, কিছু সতর্কতা ও সচেতনতা
আপনাকে ও আপনার সন্তানের জন্য নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে। কাঁচা বা অর্ধপাকা
পেঁপে, অঙ্কুরিত বা সবুজ আলু, কাঁচা স্প্রাউটস, বেগুন ও অ্যালোভেরা—এর মতো কিছু
সবজি বিশেষভাবে এড়িয়ে চলা উচিত। এর পরিবর্তে পরিমিতভাবে সুষম, পুষ্টিকর ও
নিরাপদ সবজির সমন্বয়ে খাবার প্রস্তুত করুন, যা আপনাকে সুস্বাস্থ্য এনে দেবে
স্মার্ট ইনফো ডেস্কের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করা হয়। নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url