সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন  উপকারিতা ও সতর্কতা

 ভূমিকা০১

পৌষকাল থেকে আমাদের পরিবারে শোনা যায় সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন খাও রোগে ধরবেনা। আধুনিক গবেষণাও আলিসিন আর সালফার যৌগের ভরসায় রসুনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি‑ইনফ্ল্যামেটরি ক্ষমতা স্বীকার করেছে। তবে এর যথেষ্ট সুবিধা পেতে হলে  অবশ্যই পরিমিত পরিমানে খেতে হবে । এর সাথে জানতে হবে  সঠিক নিয়ম ও সতর্কতা না হলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।



কাঁচা রসুন কুচি করলে বা কেটে রেখে দিলে ছয় থেকে দশ মিনিটের মধ্যে এতে আলিসিন গড়ে উঠে। এটি হল একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও জীবাণুনাশক উপাদান, যা ক্লোরোফিলের মতো শরীরে টক্সিন কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ভুমিকা রাখতে পারে।

সূচিপত্র
 রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বাড়ায়
খালি পেটে কাঁচা রসুন ইমিউন বুস্টার হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা সালফার যৌগ রোগজীবাণু ধ্বংস করে। শরীরে সংক্রমন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন এক কোয়া রসুন খেলে ঠান্ডা-সর্দি-কাশি ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।
রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে দৈনিক কাঁচা রসুন খেলে LDL (খারাপ কোলেস্টেরল) কমে ও HDL (ভাল কোলেস্টেরল) বেড়ে যায়, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এছাড়াও রসুন, রক্ত নালী প্রসারিত করে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করে
রসুনে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধির ক্ষমতা থাকে ফলে টাইপ‑২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সকালে খালি পেটে একটি কোয়া রসুন নিয়মিত খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্থিতিশীল থাকে।
হজম শক্তি বর্ধক
খালি পেটে  রসুন খেলে পাকস্থলির হজমে সহায়ক এনজাইমগুলি সক্রিয় হয় যা গ্যাস,পেটফোলা ভাব কোষ্ঠকাঠিন্যর  মত সমস্যার দূর করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
মেটাবলিজম বৃদ্ধি ও ওজন হ্রাস করে
খালী পেটে রসুন খেলে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন বেড়ে যায়, পেশীতে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায় ও ক্যালোরি বার্ন বেড়ে যায় এবংমেটাবলিজম বৃদ্ধি পায় ফলে ওজন কমে যায় এবং নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডিটক্সিফিকেশনে ভূমিকা
কাঁচা রসুনে থাকা  সালফার যৌগ লিভার ও কিডনির এনজাইমগুলোকে উত্তেজিত করে  টক্সিন নির্গমনে সহায়তা  করে ফলে   রক্ত ও শরীর থেকে যাবতীয় টক্সিন বেরিয়ে যায় যা আপনার দেহ কে সতেজ রাখে।
শ্বাসনালী সংক্রমণ প্রতিরোধ করে
কাঁচা রসুনে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে যা ব্রংকাইটিস হাঁপানি, ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা কমাতে সহায়ক।   প্রতিদিন সকালে খালী পেটে নিয়মিত রসুন খেলে শ্বাসনালী সংক্রমণে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠে।
ত্বক ও সৌন্দর্যের বৃদ্ধিতে ভূমিকা
রসুনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি‑ইনফ্ল্যামেটরি গুণ ব্রণ কমাতে, ত্বক পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত এক কোয়া খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়, ত্বকের প্রদাহ ও জ্বালাপোড়া কমে।
যৌন স্বাস্থ্য এবং মানসিক চাপ হ্রাস
 কাঁচা রসুনে থাকা নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালী শিথিল করে  পেনিসে রক্ত প্রবাহ উন্নত করে, যার ফলে পুরুষদের যৌন ক্ষমতা ও লিবিডো বা  যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে স্ট্রেস কমে মানসিক চাপ হ্রাস পায়।

আরো পড়ুনঃ যৌন ক্ষমতা বাড়াতে রসুন কার্যকর

সাবধানতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যদিও রসুন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত বা ভুলভাবে খেলে ক্ষতি হতে পারে।

  • খালি পেটে বেশি রসুন পাকস্থলিতে এসিড বৃদ্ধি করে গ্যাস, জ্বালাপোড়া, ডায়রিয়া হতে পারে।
  • কাঁচা রসুনে থাকা সালফারীয় যৌগ শরীর ও শ্বাস-নালি দিয়ে বেরিয়ে দীর্ঘক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়ায়। এটি ২ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।
  • রসুনে থাকা রক্ত পাতলা করার সক্ষমতা (anticoagulant action) কোন ওষুধের সঙ্গে একসাথে কাজ করলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে, বিশেষ করে যাঁরা warfarin বা aspirin জাতীয় blood-thinner নিচ্ছেন। যাদের সার্জারি নির্ধারিত আছে, তাদের কমপক্ষে ১–২ সপ্তাহ আগে থেকে কাঁচা রসুন পরিহার করা উচিত।
  • অনেকেই ত্বকের প্রদাহ ও ফুসকুরির জন্য প্রাকৃতিক অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে রসুন সরাসরি ব্যবহার করেন এতে অনেক সময় চামড়ায় ফোস্কা বা পুড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে বাচ্চাদের ত্বকে সরাসরি কাঁচা রসুন ব্যবহার করা মোটেও নিরাপদ নয়।
  • যদিও বিরল, তবুও কিছু লোকের মধ্যে রসুনে থাকা diallyl disulfide, allicin ইত্যাদি উপাদানের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে । এবং বিভিন্ন ধরণের উপসর্গ যেমনঃ nausea, diarrhoea, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা anaphylactic reaction পর্যন্ত হতে পারে।
  • গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত কাঁচা রসুন যতই স্বাস্থ্যকর হোক, মাত্রতিরিক্ত পরিমাণে খেলে লিভারে স্ট্রেস বা বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
  • অধিক রসুন খেয়ে রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, এমনকি মূর্ছা পর্যন্ত যেতে পারে।
  • যোনিস্থানে ইস্ট (যৌনাঙ্গের yeast infection)–এর সময় রসুন খেলে সংবেদনশীল টিস্যুতে জ্বালা ও চুলকানি বাড়তে পারে ও অবস্থা জটিল হতে পারে।
  • স্তন্যদানরত মায়েদের রসুন খেলে শিশুর দুধের স্বাদ বদলে যেতে পারে, এমনকি খাওয়ার ক্ষেত্রে  বাচ্চারা দুধ নিতে চায় না বা দেরিতে নেয় এ ধরণের  লক্ষণ দেখা দিতে পারে ।
  • নিয়মিত বেশি পরিমাণে কাঁচা রসুন খেলে কিছু ক্ষেত্রে চরম ঘাম,  শরীরে দুর্গন্ধের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

উপসংহার

সকালে খালি পেটে ১–২ কোয়া (৩–৬ গ্রাম) কাঁচা রসুন যথোপযুক্ত মাত্রায় খেলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়,রক্তচাপ হ্রাস পায় ও LDL‑কলেস্টেরল কমে। এর sulphur‑যৌগ ও ‘allicin’ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি‑অক্সিডেন্ট কার্যক্রম বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে । তবে খালি পেটে অতিরিক্ত রসুন খেলে পেটে জ্বালা, অ্যাসিডিটি, বমি, গ্যাস বা diarrhoea সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত GERD বা IBS‑রোগীদের ক্ষেত্রে। রসুনের রক্তপাত‑ঝুঁকি warfarin বা aspirin‑ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে বাড়ায়, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত । মুখ থেকে দুর্গন্ধ কমাতে দুধ বা দই খান, যা সহায়ক হতে পারে । কম মাত্রা থেকে শুরু করুন, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে বন্ধ করুন ও সময়মতো ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্মার্ট ইনফো ডেস্কের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করা হয়। নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url