যৌন ক্ষমতা বাড়াতে রসুন কার্যকর ভেষজ

 ভুমিকা

যৌন ক্ষমতা এবং লিবিডো নিয়ে চিন্তিত পুরুষ ও নারীরা আজকের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ঘিরে জীবনের মান উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। এমন অবস্থায় একটি সাধারণ কিন্তু অতিপ্রাচীন উপাদান রসুন আবারও আলোচনায় এসেছে যৌন সক্ষমতা ও উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তার জন্য।



আজকে আমরা আধুনিক গবেষণা ও প্রচলিত ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে আলোচনা করবো কিভাবে রসুন যৌন ক্ষমতা ও ইচ্ছা বাড়াতে সহায়তা করে।
সূচিপত্র

প্রাচীন পরিচিতি ও ঐতিহ্যবাহী ব্যবহার

হাজার বছরের পুরনো আয়ুর্বেদ ও তিব্বতী চিকিৎসায় রসুন শরীরের অগ্নি ও শুদ্ধ রক্তচলন উন্নয়নের মত লক্ষণীয় ভূমিকা পালন করে। ঐতিহাসিকভাবে, এটিকে প্রাকৃতিক বৈরাগিক ও বীর্য শক্তি বর্ধক হিসেবে ব্যবহার করা হত। প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ১৫৫০ সালে  প্রাচিন মিশরে রচিত Ebers Papyrus-এ  উল্লেখ আছে রক্তচাপ, অবরুদ্ধ ধমনী ও রোগের চিকিৎসায় রসুন কার্যকর ভূমিকা রাখে।

মিশরীয় পিরামিড নির্মাণ শ্রমিকদের সংক্রমণ রোধে, শক্তি বাড়াতে নিয়মিত রসুন খাওয়ানো হতো।মিশরীয় সমাধির ভেতর রসুন পাওয়া গিয়েছিল । প্রাচীন মিশরীয়রা বিস্বাস করতো রসুন নতুন জীবনের  উদগীরণ ঘটায়।

প্রাচীন গ্রীসে রসুনকে ফুসফুস-সংক্রান্ত রোগ, পরজীবী, ক্লান্তি, অন্ত্রসমস্যা ইত্যাদিতে চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো।

প্রাচীন রোমে রোমীয় সেনাদের নিয়মিত রসুন দেওয়া হতো যা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ছিল গ্ল্যাডিয়েটররা লড়াই শুরু করার আগে রসুন চিবিয়ে শক্তি ও সাহস বাড়াত। গ্যালেন (২য় শতাব্দী), যিনি প্রথম গ্ল্যাডিয়েটরদের চিকিৎসা করতেন, রসুনের সঙ্গে মদ দিয়ে তৈরি ব্যান্ডেজ ব্যবহার করে যা রক্তসঞ্চালন, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও ক্ষত নিরাময়ে ভুমিকা রেখেছিল। তাকে সাধারণচিকিৎসার জীবনদাতা বলা হতো।

অ্যালিসিন-বিশ্লেষণ

রসুনে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক ‘অ্যালিসিন’ আছে যা রসুন চূর্ণ করলে ১০–১৫ মিনিট পর তৈরি হয়। এটি ভেসোডিলেটর হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ রক্তনালী প্রশস্ত করে রক্ত চলাচল বাড়ায়, বিশেষ করে পেনিসে। তাই রসুন প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ই‌ডি (erectile dysfunction) বা লিঙ্গ উত্থান জনিত সমস্যায় কার্যকর।

নাইট্রিক অক্সাইড ও হাইড্রোজেন সালফাইড

রসুন নাইট্রিক অক্সাইড (NO) এবং হাইড্রোজেন সালফাইড (H₂S) দুটি শক্তিশালী ভাসোডাইলেটর এর উৎপাদন করে যা যৌন চেতনা বৃদ্ধি করে । এই যৌগগুলো যৌন উত্তেজনার সময় অঙ্গপ্রত্যঙ্গের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, ফলে যৌন ইচ্ছা জাগ্রত হয় এবং যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।

কোর্টিসোল কমাতে টেস্টোস্টেরন বাড়াতে

দেহের কোর্টিসোল বা  স্ট্রেস হরমোন কমাতে এবং টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে রসুনে থাকা অ্যালিসিন গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এটি যৌনাকাঙ্খা ওে যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে ।

ফার্টিলিটি উন্নতি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লাভ

রসুনে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যেমন অ্যালিসিন, যা টেস্টিস বা বীজাশয়ের কোষে জন্মানো ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকালগুলো ধ্বংস করে ফলে কোষগুলো অক্ষত থাকে এবং সুস্থ স্পার্ম বা বীজাণু উৎপাদন প্রক্রিয়া (spermatogenesis) বজায় থাকে। এক গবেষণা প্রকাশিত Healthline-এর আর্টিকেলে এ ১৮টি গবেষণার রিভিউ দেখিয়েছে, রসুন যুক্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট প্রায় ৪–৬ মাস ব্যবহারে পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট ও মোটিলিটি উন্নত হতে পারে।

যৌন সহনশীলতা ও শক্তি

দীর্ঘ সময় যৌন সহনশীলতা বাড়াতে বা সেক্স করতে ভারসাম্যবোধের প্রয়োজন এখানে রসুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি, শক্তি প্রবাস ও ক্লান্তি হ্রাস পাওয়ার ফলে যৌন মিলন চলাকালে দ্রূত ক্লান্তি আসা রোধ হয় ফলে দীর্ঘসময় সেক্স করা যায় ও যৌন সুখ লাভ করা যায়।

ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • প্রতিদিন ২–৫ গ্রাম রসুন (প্রায় ১–২ কোয়া) কাঁচা বা হালকা সেদ্ধভাবে খেতে পারেন । তবে চূর্ণ করে কমপক্ষে ১০‑১৫ মিনিট রাখুন যাতে অ্যালিসিন মুক্ত হয়।
  • রসুনের গন্ধ কমাতে সাথে দুধ, বাদাম দুধ বা দই রাখলে বা শেষে পুদিনা বা লেবু চিবাতে পারেন।
  • রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন এছাড়া  সালাদ, রসুন স্মুদি, রসুন চাটনি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • অতিরিক্ত রসুন খেলে টেস্টোস্টেরন এবং প্রোস্টেট সমস্যা ও স্পার্ম উৎপাদন কমে যেতে পারে।
  • গন্ধের কারণে স্বাভাবিক সামাজিক অবস্থায় অস্বস্তি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
  • রক্ত পাতলা করে, গ্যাস্ট্রিক আলসার সৃষ্টি করতে পারে বা রক্তচাপ কমে যেতে পারে এ বিষয়গুলিতে সর্তক থাকতে হবে।
  • যদি কোনো ঔষধ (যেমন antyhypertensive, ACE inhibitor) নিচ্ছেন, বা স্বাস্থ্য পরিস্থিতি (যেমন রক্তপাতের প্রবণতা, গর্ভাবস্থা) থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ কাল সম্পূরক হিসেবে রসুন গ্রহণ করবেন না।

উপসংহার

সারসংক্ষেপে, রসুন রক্তসঞ্চালন, স্ট্রেস হ্রাস, টেস্টোস্টেরন নিয়ন্ত্রণ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাবের মাধ্যমে অনেকদিক থেকে যৌন ও প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। তবে কোনও এক খাবার সর্বোত্তম নয় ,স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক শান্তি আর পরিপূর্ণ ঘুম-সহ জীবন যাপনে সার্বিক শৃঙ্খলা প্রয়োজন এবং প্রয়োজনে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ  মেনে চলতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্মার্ট ইনফো ডেস্কের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করা হয়। নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url