বাচ্চাদের ক্ষুধা বাড়ানোর ৮টি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর উপায়:

ভূমিকা

শিশুরা মাঝে মাঝে খাবারে মনোযোগ কমিয়ে দেয়, যা শিশুর  বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তির ঘাটতি তৈরি করতে পারে। তাই, নিয়মিত সময় মতো ছোট খাবার ও স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স দিন, যেমন ফল, ডালিম, চিজ ও বাদাম । 

পারিবারিক পরিবেশে মিলেমিশে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন, ডিভাইস বন্ধ রেখে খাওয়ানোর সময় আরামদায়ক পরিবেশ বজায় রাখুন । শিশুকে রান্নায় বা খাবার সাজাতে অংশগ্রহণ করান এতে খাবারের প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যাবে ।



শিশুকে খেলাধুলা করতে দিন এটি তার ক্ষুধা  বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এই সহজ অভ্যাসগুলো শিশুর ক্ষুধা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে, পাশাপাশি খাওয়ার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে।

সূচিপত্র


১. বাদাম ও বাদামের মাখন

বাদামে প্রচুর মাত্রায় প্রোটিন, ক্যালরি এবং ‘জিঙ্ক’ থাকে, যা ক্ষুধা বাড়াতে কার্যকর। বিশেষ করে শিশুদের বেশি খেতে উৎসাহিত করে আকার ক্ষুধা বাড়াতে সহায়তা করে।। পিনাট বাটার বা আমন্ড (Almond) বাটার সব ধরনের স্যান্ডউইচ বা ওটমিলের সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন।

২. দই (দধি)

দই শুধু মিষ্টি বা টক স্বাদই নয়, এটি শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য নানা দিক থেকে উপকারী। প্রথমত দইতে থাকে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া (যেমন ল্যাকটোব্যাসিলাস, বিফিডোবাসিলাস), যা পাচনতন্ত্রে সহায়ক, পেটের গ্যাস, ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় । এছাড়া দই স্বাভাবিকভাবেই ল্যাকটোজ হ্রাস করে, তাই ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু শিশুদের জন্যও হজমে সহজ হয়ে থাকে।

দইয়ে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন‑D থাকে, যা হাড় ও দাঁতের জন্য অপরিহার্য; শিশুর গড়ন ও দাঁতের সুগঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । প্রোটিনের পরিমাণও বেশ—প্রতি ২০০ গ্রামে প্রায় ১২ গ্রাম, যা শক্তি যোগায়, পেশি গঠন করে।শিশুদের আক্রমণ করে রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়াতেও দই কার্যকর—প্রোবায়োটিক ও জিঙ্কের সমন্বয়ে ইমিউন সিস্টেম মজবুত হয়, সাধারণ সর্দি-জ্বর কমে ।সঠিক দই নির্বাচন ও সঠিক মাত্রায় দেওয়ার মাধ্যমে শিশুদের স্বাদের আগ্রহ বাড়াতে,রুচি তৈরি করতে পারে এবং শারীরিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩. আদা 

আদা, রান্নার সবথেকে খুঁজে পাওয়া সস্তা স্বাস্থ্যের উপাদান, শুধু স্বাদই নয়—এটি একটি শক্তিশালী ডাইজেস্টিভ এড। এতে থাকা জিঞ্জেরল নামের সক্রিয় যৌগ হজমে সহায়তা করে, পাচক জুস ও এনজাইম উৎপাদন বাড়ায়, ফলে খাবারের সঙ্গে পুষ্টি দ্রুত ভেজ Absorb হয় । এর ফলে শিশুর ক্ষুধা স্বাভাবিকভাবেই বাড়তে থাকে। এছাড়া আদা কারমিনেটিভ, অর্থাৎ গ্যাস, ফুলে যাওয়া ও পেটে কষাভাব ধরানোর সমস্যা কমায় ।

৪. গাজর ও গাজরের রস

গাজর শিশুদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করলে স্বাদ যেমন আসে, স্বাস্থ্য উপকারেেএটি অনন্য। গাজরে প্রচুর বিটা‑কারোটিন থাকে যা দেহে ভিটামিন‑এ রূপে রূপান্তরিত হয় এতে চোখের দৃষ্টি ও ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা পায় । গাজরে রয়েছে ভিটামিন সি, কে, বি৬, মাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস–এই সব উপাদান শক্তি যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ । শিশুদের খাদ্য তালিকায় গাজর কে যুক্ত করতে পারেন।
গাজরের আঁশযুক্ত ফাইবার হজমে সহায়তা করে ও রক্তে শর্করার পরিমান ধাপে ধাপে প্রবেশ নিশ্চিত করে, ফলে বদহজম জনিত সমস্যা দূর হয় এবং খাবারে আগ্রহ বাড়ে । বিশেষ করে শিশুর জন্য তিন থেকে চারদিন অন্তর এক গ্লাস গাজরের রস খাওয়ালেও ক্ষুধার মাত্রা বেড়ে যায়, কারণ এতে থাকা ভিটামিন‑এ ও ফাইবার হজমে জাগরণ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষুধা উদ্দীপিত করে ।

৫.পেঁপে

পেঁপে, এই কোমল ও মিষ্টি ফল শুধুমাত্র স্বাদ নয়, এটি আপনার শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। পেঁপের প্রধান উপাদান পাপাইন — একটি শক্তিশালী প্রোটিওলাইটিক এঞ্জাইম, যা প্রোটিন ভেঙে ভিটামিন ও খনিজ দ্রুত হজমে সহায়তা করে; ফলে খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ বাড়ে ও ক্ষুধাও বৃদ্ধি পায় । এছাড়া, পেঁপে ফাইবারসমৃদ্ধ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হজমে সহজতা নিয়ে আসে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, ফলস্বরূপ শিশুদের আসন্ন খাবারে আগ্রহ থাকে ।

পেঁপের ভিটামিন সি ও এ উচ্চ মাত্রায় উপস্থিত থাকে, যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, চোখের দৃষ্টি উন্নত করে এবং ত্বকে উজ্জ্বলতা আনে । পেঁপের রসে প্রোটিন হজমে সহায়ক পাপাইন ছাড়াও প্রচুর পানি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা গ্যাস, ব্লোটিং ও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।পেঁপে ও তার রস একটি সামগ্রিক, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর উপায়, যা শিশুদের হজমে সহজতা ও ক্ষুধায় উৎসাহ এনে তাদের সুস্থ বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৬. সবুজ ও শুকনো ফল

সবুজ ফল (যেমন আনারস, আপেল, পেয়ারা জাতীয়) এবং শুকনো ফল (যেমন কিশমিশ, খেজুর, ইচরি, )প্রকৃতির পুষ্টিকর উপহার ও ক্ষুধার উদ্দীপক।এগুলো শিশুদের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করলে তা টিপিক্যাল খাবারের পরিপূরক হয়ে ওঠে। প্রথমে সবুজ ফল সম্পর্কে কথা বললে, এগুলোতে প্রচুর ভিটামিন সি, জল, এবং ফাইবার থাকে, যা হজমকে স্বাভাবিক রাখে ও পেট ভরে রাখে । তবে বেশি টক না হলে শিশুদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে যায়।
শুকনো ফলের কথা বললেই আগে আসে কিশমিশ ও খেজুর– এগুলোতে আছে ঘনিষ্ঠভাবে সরূপ ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ভিটামিন‑এ,‑কে, ফোলেট, যা হজমে সাহায্য, লকস হারানো কমানো ও ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে । যেমন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত শুকনো ফল খাওয়া শিশুদের ডায়েট কোয়ালিটি বৃদ্ধি পায়।

৭.শাকসবজি ও শস্যজাতীয় অনুষঙ্গ

আপনার শিশুকে নিয়মিত সুষম খাবার এবং শাক সবজি যেমন পালং শাক, লাল শাক, কলমির শাক ,মিষ্টি কুমড়া শস্য জাতীয় অনুসঙ্গ দিন।, সেজন্য প্রতিদিনের খাবারে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি (বিশেষ  শস্যজাতীয় খাবার একসাথে রাখা জরুরি। ঢালাজাতীয় শাক যেমন পালং শাক, কেল, ব্রকলি এগুলোতে তীব্রভাবে ভরপুর থাকে ফাইবার, ভিটামিন A, C, K, ফোলেট, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, যা হজমে সহায়তা করে, রক্তসংবহন ভালো করে, পশ্ছাদবৃত্ত উন্নত করে এবং হাড়-দাঁতের গঠনে অবদান রাখে । ডার্ক গ্রিন শাকগুলোতে বিদ্যমান প্রিবায়োটিক উপাদান ‘সালফোকুইনোভোজ’ সহ ফাইবার, হজমপ্রক্রিয়ার পথ প্রশস্ত করে, গাট-হেলথ ও ক্ষুধা বাড়াতে সহায়তা করে ।, ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়।

৮.ফেনেল ও আখরোটী দানা 

ফেনেল বা সাওফ এ রয়েছে শক্তিশালী কারমিনেটিভ ও অ্যান্টিস্পাসমডিক বৈশিষ্ট্য, যা শিশুদের গ্যাস, ফুলে যাওয়া বা পেটের ক্র্যাম্প উপশম করে । এক চা‑চামচ ফেনেল দানা ভেজানো বা সরাসরি ক্রাশ করে শিশুর পানীয় তে মেশানো হলে, এটা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং ক্ষুধা বাড়ায় । পাশাপাশি, এতে থাকা ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (যেমন ভিটামিন সি) শিশুর গায়ের বৃদ্ধি, হাড় ও রোগপ্রতিরোধে কার্যকর । তবে খেয়াল রাখা জরুরি: ছোট ফেনেল দানা সরাসরি না দিয়ে এগুলো পানীয় বা পিউরিতে ব্যবহার করা উচিত, কারণ চোকিং ঝুঁকি রয়েছে । অ্যালার্জি ও ওষুধের পরিপ্রেক্ষিতেও সতর্কতা প্রয়োজন ।

আখরোটী দানা অর্থাৎ পাম্পকিন সিড দানাগুলো হলো প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ফাইবার, ভিটামিন-ই ও জিঙ্ক–এর একটি ঘন উপাদান। শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে প্রয়োজনীয় লোহা, ম্যাগনেশিয়াম ও তামা সমৃদ্ধ হওয়ায়, স্মৃতি ও একাগ্রতা উন্নতিতে সহায়ক ।
রাতভর ভিজিয়ে রাখা ফেনেল ওয়াটার পরিমিত (১০–১৫ মি.লি) খাওয়ান, অথবা দিনে ফেনেল চা দিতে পারেন। পামকিন সিড বা আখরোটি দানা গ্রিন পেপিটা রোস্ট করে নিদিষ্ট পরিমাণে স্ন্যাক হিসাবে দিন, অথবা ছোট বাটিতে আয়োজিত বিভিন্ন খাবারে মিশিয়ে দিন দই, সিরিয়াল, ওটমিল বা স্যালাডে। এটি শিশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণে যথেষ্ট সহায়ক হবে।

উপসংহার

  • বাচ্চাদের স্বাভাবিক ক্ষুধা খুবই পরিবর্তনশীল; তবে কিছু পুষ্টিকর খাবার ও সঠিক অভ্যাস মেনে চললে তা স্থিতিশীল ও বাড়তে পারে। একজন অভিভাবক হিসেবে আপনি নিচের কাজগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
  • নিয়মিত খাদ্য সময়, ছোট খাবার দিনে ৪–৫ বার দেওয়া ও বেশি জল না খাওয়ানোর রুটিন ক্ষুধার  ভাব কে সক্রিয় রাখে ।
  • শারীরিক উদ্দীপনা যেমন বাচ্চাদের  খেলা বা হাঁটাহাঁটির ব্যবস্থা করা ।এর মাধ্যমে, হজম ও ক্ষুধা দুইই বাড়াতে সাহায্য করে ।
  • ক্যালরি ও পুষ্টিতে ভরপুর খাবার (যেমন দই, বাদাম, শুকনো ফল, শস্য, শাকসবজি) খাওয়ানো। এটি শরীর ও মনের উন্নয়ন ঘটায় ।
  • পজিটিভ পরিবেশ, পরিবারের সঙ্গে মিলেমিশে খাওয়া, খাবারে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা ।এটি একটি  প্রাকৃতিক প্রণোদনা তৈরি করতে পারে ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্মার্ট ইনফো ডেস্কের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করা হয়। নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url