বর্ষাকালের সবজি সমাহার: স্বাদ ও পুষ্টিতে ভরপুর ১০টি সবজি”
ভূমিকা
বাংলাদেশে বর্ষাকাল (জুলাই–সেপ্টেম্বর) শুরু হলে চারদিকের কৃষিভূমি ভেজা থাকে যা কিছু নির্দিষ্ট সবজির চাষের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। প্রচণ্ড গরম থেকে মুক্তি, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং আদ্রতা এই সময়ের আবহাওয়া অনেক ধরনের সবজি চাষের জন্য উপযোগী। তবে এসময় বজায় থাকতে পারে জলাবদ্ধতা, পোকামাকড় ও ফাঙ্গাল রোগের সমস্যা।
তাই কিছু সাবধানতা নেওয়া জরুরি।নিচে বর্ষাকালে পাওয়া যায় এমন অন্যতম ১০টি সবজি ও
সেগুলোর পুষ্টিগুণ তুলে ধরা হলো।
সূচিপত্র
১. ঢেঁড়স
পুষ্টিগুণঃ ভিটামিন C ও K, ফাইবার, ম্যাগনেশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে
ভরপুর।
উপকারিতাঃ হজমে সাহায্য, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, ইমিউন সিস্টেম
শক্তিশালী, ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।কাজেই বর্ষাকালে খাবার তালিকায় ঢেঁড়স রাখুন
।একদিকে যেমন এটি আপনার রান্নায় নতুন স্বাদ যোগ করবে অন্য দিকে আপনার শরীরের
পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।
২.শসা
পুষ্টিগুণঃ হাইড্রেশন উপযোগী । এছাড়া ভিটামিন A, C, K,
ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন সমৃদ্ধ।
উপকারিতাঃ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করে,
ডিটক্স কার্যকর। বিশিষ্ট পুষ্টিবিদের মতেঃ “শসাতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন C,
ভিটামিন A এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট”। শসা সালাদের উপকরণ এবং তরকারীতে ব্যবহার
করা যায়। পুষ্টিগুন বিবেচনায় শসাকে একটি আদর্শ সবজি বলা যেতেই পারে।কাজেই
বর্ষাকালে বেশীকরে শসা খান।
৩.লাউ
পুষ্টিগুণঃ এতে রয়েছে ভিটামিন C, B1, B3, B5, ফোলেট,
ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, ফাইবার।
উপকারিতাঃ হাইড্রেটিং, অর্থাৎ দেহের পানির সুস্থ
ভারসাম্য ধরে রাখে , ওজন কমায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। লাউ ভাজি এবং বিভিন্ন মাছ রান্নাতে সবজি
হিসেবে ব্যবহার করা হয় বিশেষ করে শোল মাছ ও লাউয়ের তরকারীর তুলনা হয়না।
৪.পটল
পুষ্টিগুণঃ আয়রন, ফাইবার ও ভিটামিনে সমৃদ্ধ পটল।
উপকারিতাঃ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও
হজম উন্নত করে; “রক্ত ও টিস্যু পরিষ্কার করে ত্বকের যত্ন নেয়। পটল ভাজা ওমাছের
তরকারীতে পটলের বিকল্প খুঁজে পাওয়া যায়না। সুতরাং বর্ষাকালে পটল খেতে পারেন।
৫. ঝিঙা
পুষ্টিগুণঃ এতে রয়েছে ভিটামিন A ও C, ক্যারোটিন, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
উপকারিতাঃ ডিটক্সিফায়ার, পাকস্থলীর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো; শ্বাস-প্রশ্বাসের
স্বাস্থ্যে সহায়ক। ঝিঙা অত্যন্ত সুস্বাদু একটি সবজি । বর্ষাকালে ঝিঙে দিয়ে
ভাজি, সবজি এছাড়া মাছের ঝোল রান্না যায় যা খেতে দারুণ লাগে।
৬.করলা
পুষ্টিগুণঃ করলায় রয়েছে ভিটামিন A, C,এবং ফাইবার।
উপকারিতাঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর, অ্যাজমা ও গলার প্রদাহে সহায়ক। করলা ভাজি
এবং মাছ রান্নায় সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বর্ষাকালে বেশী বেশী করলার
সবজি খান।
৭.শাক পরিবারের সবজি(পুঁই,পালং,কলমি শাক)
পুষ্টিগুণঃ লৌহ, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন A ও C।
উপকারিতাঃ হাড় ও রক্তস্বাস্থ্যে সহায়ক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। শাক
ভাজি ,সেদ্ধ, আবার অনেক সময় মাছ রান্নায় পুঁই এবং পালং শাক ব্যবহার করা হয় ।
৮.মিষ্টি কুমড়া
পুষ্টিগুণঃ এতে রয়েছে লো ক্যালরি, ফাইবার, ভিটামিন A, C, B6, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
উপকারিতাঃ ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, দৃষ্টি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।
বাচ্চাদের জন্য সবজি খিচুরি রান্নায় ব্যবহার করা যায় যা অত্যন্ত
পুষ্টিকর। মিষ্টি কুমড়া ভাজি এবং তরকারীর স্বাদের বৈচিত্র্য আনতে
সহায়তা করে।বর্ষাকালে বেশী করে মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন।
৯.চাল কুমড়া
পুষ্টিগুণঃ ভিটামিন A, C, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, খনিজ ।
উপকারিতা: দৃষ্টি, হজম, হাড় দাঁতের স্বাস্থ্য এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে
সহায়ক। চাল কুমড়ার ভাজি এবং তরকারী স্বাদে অতুলনীয়। এই বর্ষায় চাল কুমড়ার
পুষ্টি গ্রহণ করতে ভুলবেন না।
১০.কচু
পুষ্টিগুণঃ এতে রয়েছে আয়রন, ভিটামিন A, C, পটাশিয়াম
,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেশিয়াম,ম্যাঙ্গানিজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার।
উপকারিতাঃ রক্তে হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখে। ভিটামিন A চোখের স্বাস্থ্যে
সহায়ক ভিটামিন C ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মরীরে ইমিউনিটি বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ ও
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে ,ওজন নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
শেষ কথা
বর্ষাকালীন এই ১০টি সবজিতে রয়েছে বহুমাত্রিক পুষ্টিগুণ ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দ্রব্যে ভরপুর। এগুলো নিয়মিত খাদ্যে রাখলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, হজম ভালো হবে, ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে এবং ওজন-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ফ্লোটিং বেড এর মতো স্বচালিত কৃষিপদ্ধতি ব্যবহার করলে পরিবেশ ও কৃষকের আয় দুটোই বাড়তে পারে।
তাই বর্ষাকালীন সময়ে হাত লাগান এসব সবজিতে, কিম্বা বাড়ির ছাদে সরাসরি চাষ করুন। বাংলাদেশের মাটিতে পাওয়া যায় এমন প্রকৃতির দেয়া উপহারকে গ্রহণ করুন, স্বাস্থ্যবান হোন, সবুজ থাকুন।
স্মার্ট ইনফো ডেস্কের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করা হয়। নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url