সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ও মহার্ঘ ভাতা আপডেট

ভূমিকা

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়িয়েছে সরকার। ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ সরকার সরকারি চাকরিজীবী ও পেনশনভোগীদের জন্য একটি বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে, গ্রেড ১–৯ এর কর্মচারীরা  বেসিকের  ১০%, আর গ্রেড ১০–২০ এর কর্মচারীরা ১৫% হারে বিশেষ প্রণোদনা পাবেন । এটি শুধুমাত্র কর্মরত চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রেই নয়, পুনঃস্থাপনকৃত পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে, তবে ন্যূনতম পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে চাকরিজীবীদের জন্য ১,৫০০ টাকা ও পেনশনভোগীদের জন্য ৭৫০ টাকা ।




এই পদক্ষেপ বর্তমান মূল্যস্ফীতি ও জীবন যাত্রার খরচ বৃদ্ধির ফলে সরকারি কর্মচারীদের আয়-ব্যয়ে সামঞ্জস্যের আশ্বাস দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি আর্থিক অস্থিরতা দূরীভূত করতে পারবে না যদি না মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয় ।

সরকার আরও ঘোষণা করেছে যে, এই বিশেষ প্রণোদনা কার্যকর হলে সরকারের অগ্রিম ব্যয় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে যা আগামী বাজেটের আওতায় বড় ধরনের আর্থিক চাপের নির্দেশ দিচ্ছে। এ অর্থ কীভাবে সংস্থান করা হবে, বেসরকারি খাতে এর প্রভাব কী হবে, এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি মূল্যস্ফীতি ও সামাজিক বৈষম্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে কি না এসবই বিষয় ঘিরে আলোচনার প্রকটতা বাড়ছে।

সূচিপত্র

নতুন প্রণোদনার হার

  • ১ম–৯ম গ্রেড: বর্তমান ৫% থেকে বাড়িয়ে ১০% প্রণোদনা পাওয়া যাবে।
  • ১০ম–২০তম গ্রেড:৫% থেকে বাড়িয়ে ১৫% বাড়তি সুবিধা মিলবে।
  • ন্যূনতম পরিমাণ চাকরিরতদের জন্য ১,৫০০ টাকা, পেনশনভোগীদের জন্য ৭৫০ টাকা

অর্থাৎ যারা উচ্চ গ্রেডে  কর্মরত তাদের জন্য (১ম-৯ম গ্রেড) মোট প্রনোদনা দাড়াঁচ্ছে ১০%,নিম্ন গ্রেডের (১০তম-২০তম) কর্মচারীদের জন্য প্রণোদনা ১৫% পর্যন্ত উঠছে। এছাড়া পেনশনভোগী সরকারি কর্মচারী যাদের পেনশনভাতা ১৭,৩৮৮ টাকা বা তার চেয়ে কম তারা আহরণকৃত ভাতার ১৫% এবং ১৭,৩৮৮ টাকার বেশী ভাতা আহরণকারী পেনশনারগণ তাদের পেনশন ভাতার ১০% হারে সুবিধা প্রাপ্ত হবেন।
সাময়িক বরখাস্ত কৃত কর্মচারীরাও এই সুবিধা আওতায় থাকবেন। তারা তাদের সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার তারিখের অব্যবহৃত পূর্বের বেসিকের ৫০% এর উপরে গ্রেড ভিত্তিক সরকার কর্তৃক ঘোষিত নির্ধারিত হার অনুযায়ী সুবিধা প্রাপ্ত হবেন। অবসর উত্তর ছুটিতে থাকা কর্মচারীগণ অবসরে গমনের  পূর্বকালীন সর্বশেষ প্রাপ্ত মূল বেতনের ভিত্তিতে  বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত হবেন। তবে বিনা বেতনে ছটিতে থাকা কর্মচারীগণ এ বিশেষ সুবিধা প্রাপ্য হবেন না।

সরকারে অতিরিক্ত ব্যয়: প্রায় ৭ হাজার কোটি

এই ঘাটতি পূরণ করতে যে অতিরিক্ত ব্যয়ের ঘটনা ঘটছে, তা প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা সরকারি হিসেব অনুযায়ী। সরকারি বেতন ও ভাতা বরাদ্দের পর এই বিশাল প্রকৃত ব্যয়ই মূল আলোচ্য বিষয়। ২০১৫ সালের পর থেকে সরকারি কর্মচারীদের কোন পে-স্কেল ঘোষিত না হওয়ায় সরকারি কর্মচারিদের বাড়তি জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় রেখে এই বিশেষ আর্থিক সুবিধা ঘোষণা করলো সরকার।

প্রেক্ষাপট: মূল্যস্ফীতি, বেতন কাঠমো ও যৌক্তিকতা

মূল্যস্ফীতির চাপ: ২০২৪–২৫ অর্থ বছর ও চলতি সময়ে দেশে মূল্যস্ফীতি কিছুটা উচ্চ পর্যায়ে আছে।এই প্রেক্ষাপটে সরকারের এই উদ্যোগ সরকারি কর্মচারীদের ক্রয়ক্ষমতা রক্ষা করতে সহায়ক হিসাবে দেখা হচ্ছে।তবে এক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি কে নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে সচচেয়ে বড় চ্যালেন্জ। 
বেতন কাঠামোর অভাব: দীর্ঘদিন কোনো জাতীয় বেতন কাঠামো না থাকার এবং কোন পে স্কেল ঘোষিত না হওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করা মুশকিল হয়ে পড়েছিলএই প্রেক্ষিতে “বিশেষ সুবিধা” বাড়ানো প্রয়োজন বলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেছেন।
বৈষম্য তৈরি হওয়ার আশঙ্কা: বেসরকারি কর্মীদের তুলনায় সরকারি কর্মচারীরা আর্থিক সুবিধা পেলে এক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়তে পারে, এমন উদ্বেগ উঠে এসেছে সিপিডি ও সানেমসহ কিছু সানেম ও সিপিডির মত সংগঠন বলছে, সোশ্যাল জাস্টিসে ভাটা পড়তে পারে, ফলে কর কাঠামো সহজ জাতীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রতিক্রিয়া

অনেকেই মনে করছেন, মূল্যস্ফীতির সময়ে এই বিশেষ আর্থিক সুবিধা অনেকটা রিলিফ প্যাকেজ সরকারের পক্ষ থেকে। তবে বেসরকারি চাকরীজীবিরা এক্ষেত্রে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।সরকারি বেতন বাড়লেও বেসরকারি পর্যায়ে বেতন না বাড়লে বা আর্থিক সুবিধা প্রদান করা না হলে আয় বৈষম্য তৈরি হবে যা ভোগ প্রবনতাকে প্রভাবিত করতে পারে ফলশ্রুতিতে এর সরাসরি প্রভাব বাজারে পড়তে পারে। সরকারি কর্মচারীদের দেখাদেখি বেসরকারি চাকরিজীবীরা বেতন বাড়ানোর দাবি তুলবে; এতে মালিকদের  চাপে পড়তে হতে পারে ।

বিশ্লেষকদের পরামর্শ

বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, শুধু সরকারি বেতন বৃদ্ধি পেলে বেসরকারি কর্মচারীরা বঞ্চিত হলে, তা বেসরকারি কর্মীদের জন্য বৈষম্য সৃষ্টি করবে এবং অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে ।তারা প্রস্তাব করেন, সরকারি বেতন বাড়ার আগে বেসরকারি সেক্টরের অবস্থাও খুঁটিয়ে দেখা উচিত, যাতে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।কর বাড়ানোর পরিবর্তে রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্ভাবনী পথ খুঁজে বের করতে হবে। রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

শেষ কথা

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বেতন সংক্রান্ত এই প্রণোদনা বাড়ানোর উদ্যোগ মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় সহায়ক, তবে এটি একটি বড় ব্যয় ৭ হাজার কোটি টাকা যার সংস্থান সরকারকে করতে হবে। যদিও সরকারি কর্মচারীরা স্বস্তিবোধ করতে পারেন, বেসরকারি খাতের কর্মীরা উদ্বিগ্ন, এবং বিশ্লেষকেরা বলছেন এতে সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্য বাড়তে পারে। দীর্ঘমেয়াদে উপযোগী হতে চাইলে প্রয়োজন রয়েছে একটি সমন্বিত বেতন কাঠামোর, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের, এবং বেসরকারি–সরকারি সমতা রক্ষার। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রণোদনা নয় চিরস্থায়ী সমাধান আঁকতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্মার্ট ইনফো ডেস্কের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করা হয়। নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url