গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা

ভূমিকা০১

গর্ভাবস্থায় দেহের হাইড্রেশন ও পুষ্টির চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। প্রাকৃতিকভাবে ৯৫% জল ও পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ ডাবের পানি ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রেখে ক্লান্তি ও ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে । গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড কমাতে সহায়ক হিসেবে এটি হৃৎপিণ্ডের ধমনীর চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও হার্টবার্ন থেকে মুক্তি দিতে পারে । এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে তা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষা করে । 



এছাড়াও এটি স্বাভাবিক ডায়াজেস্টিভ এন্জাইম ও ফাইবার সরবরাহ করে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ইউটিআই প্রতিরোধে সহায়তা করে ।  গর্ভস্থ মা ও সন্তানের জন্য ডাবের পানি একটি স্বাস্থ্যকর ও কার্যকর বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে।

সূচিপত্র
গর্ভাবস্থা সাফল্যমণ্ডিত হোক তাতে মায়ের ঠিক মতো পুষ্টি পাওয়া এবং শরীর ঠিকমতো হাইড্রেটেড থাকা অবশ্যই জরুরি। এই সময় জনপ্রিয় একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় হলো ডাবের পানি। এটি শুধুমাত্র স্বাদে মিষ্টি নয়, বরং প্রাকৃতিকভাবে  উপকারী মৌলিক উপাদানে ভরা। আসুন বিস্তারিত দেখি।
১. হাইড্রেশন ও ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য
ডাবের পানি প্রায় ৯৫% জল, যা শরীরকে দ্রুত হাইড্রেট করে । গর্ভকালীন সময়ে বমি, ঘাম ও প্রস্রাবে শরীর থেকে জল ও ইলেকট্রোলাইট নির্গত হয়। এখান থেকেই potassium, sodium, magnesium-এর মতো ইলেকট্রোলাইটসমূহ অ্যাডজাস্টমেন্ট করে ডাবের পানি শরীরের ইলেকট্রোলিট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে ।
২. ক্লান্তি দূরীকরণ ও এনার্জি বুস্ট
গর্ভাবস্থায় এনার্জি খরচ বেড়ে যায়, এবং প্রাকৃতিক চিনি ডাবের পানিতে পাওয়া যায় যা দ্রুত শরীরে এনার্জি যোগায় । এই চিনি অতিরিক্ত না হলেও, তা ক্লান্তি দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক ইসোটনিক পানীয়, যা ব্যায়ামের পরও কার্যকর ।
৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
প্রেগনেন্সিতে হাই রক্তচাপ বা প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার ঝুঁকি থাকে। ডাবের পানি উচ্চমাত্রায় potassium, magnesium ও lauric acid যুক্ত যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে। এমনকি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে স্বল্প সময়েও সিস্টোলিক রক্তচাপ হ্রাস পেয়েছে । তবে অবশ্যই এটি প্রাথমিক মাত্রায়, চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে পান করতে হবে।
৫. পেটের সমস্যা: এসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য
গর্ভের সময় পিএচ পরিবর্তিত হতে পারে, যা হার্টবার্ন বা acid reflux সৃষ্টি করে। ডাবের পানি আল্কালাইন প্রকৃতির, তাই গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড কমাতে সহায়ক । পাশাপাশি এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে ।
৬. ত্বকের যত্ন ও স্ট্রেচ মার্ক প্রতিরোধ
গর্ভকালীন ত্বক বিমর্ষ হয়ে যায়, খুশকি ও স্ট্রেচ মার্ক দেখা দিতে পারে। ডাবের পানি পুষ্টি ও হাইড্রেশন দিয়ে ত্বকের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখে, ক্লান্তি দূর করে এবং মাঝেমাঝে ফেসমাস্ক হিসেবেও ব্যবহৃত হয় ।
৭. অন্তঃস্রাব রক্ষা ও প্রি-টার্ম লেবার প্রতিরোধ
প্রতিদিন ডাবের পানি পান করে শরীরের আলকালীজান বাড়ে, যা অন্তঃস্রাবের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে । তাছাড়া আবার অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল গুণে ইউটিআই ও প্রিটি-লেবার ঝুঁকি কমে ।
৮. গর্ভজাত শিশুর বৃদ্ধি ও খনিজ সাপোর্ট
ডাবের পানিতে পাওয়া যায় ছোট পরিমাণে calcium, magnesium, phosphorus যা গর্ভে শিশুর হাড়  ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে । বিশেষ করে magnesium নিতে পরামর্শ দেয়া হয় প্রিক্ল্যাম্পসিয়া প্রতিরোধের জন্য। প্রিক্ল্যাম্পসিয়া (Preeclampsia) হলো গর্ভাবস্থায় একটি গুরুতর রোগ—এটি সাধারণত ২০ সপ্তাহের পর শুরু হয় এবং মায়ের উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে কিডনি, লিভার ও অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতির লক্ষণ সহ জন্ম দেয়।
৯. ওজন নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যকর বিকল্প
সাধারণ পানীয় ও জুসে অতিরিক্ত চিনি ও ক্যালরি থাকে। ডাবের পানি কম ক্যালরি (৫০ ক্যালরি / ১০০ মিলি) ও প্রাকৃতিক চিনি-তে তৈরি তাই এটি একটি ওজন নিয়ন্ত্রণে  স্বাস্থ্যকর বিকল্প ।
১০. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাপোর্ট ও ফ্রি-রেডিক্যাল রোধ
ডাবের পানি L-arginine, cytokines, vitamin C, selenium, zinc, manganese-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এগুলো ফ্রি-রেডিক্যাল ক্ষতি কমিয়ে শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয়।

নিরাপত্তা ও সাবধানতা০৩

১.বেশি potassium পেলে hyperkalemia হতে পারে, যা হৃদস্পন্দন বা পেশীর দুর্বলতা ঘটাতে পারে ।
২.ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে ডাবের পানির চিনির দিকে সতর্ক  দৃষ্টি রাখা জরুরি ।
৩.কোকোনাট অ্যালার্জি থাকলে ডাবের পানি থেকেও বিরত থাকুন ।
৪.একাধিক ইলেকট্রোলাইট–যেমন Liquid IV– খেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে ।

ডাবের পানি পান করবেন কিভাবে?০৪

১.প্রতি দিন ১–২ গ্লাস: এটাই নিরাপদ এবং পর্যাপ্ত।
২.তাজা উন্মোচিত বা প্যাকযুক্ত: প্রক্রিয়াজাত ডাবের পানি থেকে সংরক্ষণে added sugar বা কনজারভেটিভস‌ এড়াতে তাজা বেছে নিন।ফ্যাব্রিক্যাটেড পণ্যে মাইক্রোবায়াল সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
৩.বিশেষ করে যাদের রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি ইত্যাদি সমস্যা রয়েছে তাঁরা ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

উপসংহার০৫

সারসংক্ষেপে, গর্ভকালীন সময় ডাবের পানি একটি স্বাভাবিক, নিরাপদ ও কার্যকর পানীয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে ৯৫% জল ও পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম-এর মতো ইলেক্ট্রোলাইট থাকে, যা দেহে হাইড্রেশন ও ক্লান্তি প্রতিহত করতে সাহায্য করে । এছাড়াও এটি অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও কোষ্ঠকাঠিন্য উপশমে সহায়তা করে, এবং কিছু মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি সরবরাহ করে শিশুর হাড় ও ত্বকের উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারে । তবে, বার্ধক্য বা ডায়াবেটিস কিডনি সমস্যায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে সঠিক মাত্রার ডাবের পানি গ্রহণ অপরিহার্য । ফলে, নিয়মিত ও পরিমিত ডাবের পানি গর্ভকালীন সময়ের জন্য স্বাস্থ্যকর একটি প্রাকৃতিক বুস্ট হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্মার্ট ইনফো ডেস্কের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করা হয়। নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url