১. সম্ভাবনার বিশ্লেষণ
১.১ সূর্য–জ্যোতির উজ্বল ডেটা
ইনসোলেশনঃ বাংলাদেশে গড়ে ৪–৬.৫ kWh/m²/দিন সূর্যালোক পাওয়া যায়; অধিকাংশ দিন
৫ kWh/m²/d ইনসোলেশন রয়েছে ।
সৌর ক্ষমতাঃ বৈজ্ঞানিক হিসেবে বাংলাদেশে তাত্ত্বিকভাবে ৭০,০০০ TWh বিদ্যুৎ
উৎপাদন সম্ভব – যা প্রয়োজনের প্রায় ১৫০০ গুণ।
১.২বিদ্যমান প্রকল্প
মেগা–সোলার পার্ক: বর্তমানে ≈৪৫৯ MW (১০টি প্ল্যান্ট), এর ভেতরে Teesta Solar
২০০ MW একক পার্ক নাম এসেছে।
ছাদে সৌর (Rooftop Solar): ২০১৮–এ রোফটপ নেট–মেটারিং নীতি আনায় পছন্দ
বাড়লেও এখনও মাত্র ~৮৪.৬ MW নেট-মিটারিং ও ৬৯.৯৩ MW অন্য ছাদে বসানো চালু
রয়েছে।
ছোটস্থানীয় সিস্টেম: SHS–এর মাধ্যমে ≈৬ মিলিয়ন সিস্টেম স্থাপিত;
বর্তমানে ≈২ মিলিয়ন সক্রিয়।
অফ–গ্রিড নেটওয়ার্ক: ২৮ মিনি–গ্রিড আছে, মোট ≈5.8 MWp ।
১.৩ নীতিমালার সুবিধা
ভর্তুকি ও কর-ছাড়: ইনভেন্টার, প্যানেল, স্ট্রাকচারে ১০ বছর ট্যাক্স
অব্যাহতি ও ভাট ত্যাগ।
গ্রিড–মিটারিং সুবিধা: নেট–মিটারিং চালু হলেও প্রণোদনা ও কাঠামো
সীমিত।
২. শক্তিহাস বা চ্যালেঞ্জসমূহ
২.১ ভূমিসংকট
- পোস্ট–জোড়া পাম্পিং, ট্রান্সমিশন লাইন বাড়ানোর খরচ বেশি ।
- রোফটপ–সলার ম্যানেজমেন্টে বিপরীত ফিড, ভোল্ট রাজস্ব চ্যালেঞ্জ ।
- ব্যাটারি ও স্টোরেজ ব্যবস্থা না থাকায় cut-off থাকে।
২.৪ প্রযুক্তি এবং কর্মীবৃন্দ দুর্বল
- সব উপাদান আমদানির উপর নির্ভর; ইনভার্টার ও ব্যাটারি দেশীয় নয়।
-
রক্ষণাবেক্ষণ ও দূষণ (ধোঁয়া, ময়লা, পাখির মল) সার্ভিস নেই;
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স–ডাস্ট মোডেল উদ্ভাবন হয়েছে যদিও এখনও সচল হয়
নি ।
- টেকনিশিয়ানের ঘাটতি ও প্রশিক্ষণের অভাব ।
২.৫ নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতা
- ২০১২–এর বাধ্যতামূলক রোফটপ নীতির দুর্বল বাস্তবায়ন ।
-
অনুমোদন প্রক্রিয়া জটিল, নির্দেশনা অস্পষ্ট; যেমন জীবানু এবং
নেট–মিটারিং নীতির রূপরেখা উন্নত না হওয়ায় তা অকার্যকর ।
- SREDA, BPDB–র মত প্রতিপাদ্য সংস্থা যথেষ্ট
- দক্ষতা নির্ধারণ করে না।
২.৬ দুর্নীতি ও স্বার্থচক্র
-
CHT–এ SHS প্রকল্পে ঘুষ নেওয়া হচ্ছে । চিরাচরিত অনিয়ম তো রয়েছেই এর
সাথে ঘুষ না দিলে সিস্টেম দেওয়া হচ্ছে না।
-
এছাড়া ধূলা–পাখি–বর্জ্যের কারণে রোফটপ প্যানেলের কার্যক্ষমতা কমে যায়,
প্রতি সপ্তাহে ৩%।
৩. প্রতিকার ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি
৩.১ ভূমি প্রয়োগে বিনিয়োগ-নবীনতা
ভাসমান সৌরঃ জলাশয় ও ইউজড মরুভূমির চেয়েও জমি সংকট নিরসনে উপযোগী।
৩.২
ভার্টিক্যাল/অ্যাগ্রোফটোইনটিগ্রেশানঃ ফসলের সাথে একই জমিতে প্যানেল
ইনস্টল করে অনাবাদি ফসল ক্ষেত্র রক্ষা করা যেতে পারে ।
৩.৩ সরকারি ও বর্জ্য জমিতে বিনিয়োগঃ পাথর-পোল্ট্রি বা কার্যহীন জমি ধ্বংস না করে, প্রাইভেট পার্টনারদের
মাধ্যমে ইউটিলিটি নির্মাণ।
৩.২ অর্থায়নে উদ্ভাবনী সংস্কার
IDCOL মাইক্রো–ফিন্যান্স
ও
Pay-as-you-go মডেল
সম্প্রসারণ
প্রয়োজন; গ্রামীণ
জনগোষ্ঠীর
জন্য
সুদ-হ্রাস
করে
ঋণ
দিবে
সরকার–ব্যাংক
সহযোগিতা করবে।
সবচেয়ে
বড়
কর
প্রণোদনা ১৫% VAT ছাড়, ৫
বছরের
ট্যাক্স
হলিডে, গ্রিন
ট্রান্সফরমেশন
ফান্ড–এর
সহজ
ঋণ
সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৩.৩ গ্রিড ও স্টোরেজ উন্নয়ন
স্মার্ট
মাইক্রো–গ্রিড এর ক্ষেত্রে ব্যাটারি
ডায়নামিক্স, গ্রিড-সাপোর্ট
ইনভার্টার–সহ
ইন্টেলিজেন্ট
ফলো-আপ
নেটওয়ার্ক
গঠন করতে হবে।
গ্রিড
রক্ষণাবেক্ষণ
ও
স্টেবিলিটির ক্ষেত্রে সরকারের
অধীনে: BPDB/BPDB–কে
পুনর্গঠন
করে গঠনমূলক সংস্কার
আনতে
হবে।
স্টোরেজ/ব্যাটারি
স্কেল–আপ ক্ষেত্রে লিথিয়াম
ও
অন্যান্য
স্টোরেজ
প্রযুক্তিতে
রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট
বাড়াতে
হবে।
৩.৪ প্রযুক্তি ও দক্ষতা উত্থান
স্থানীয়
প্যানেল
উৎপাদনঃ
প্যানেল
ইমপোর্ট
কমিয়ে, দেশীয়
ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি করতে হবে।
উৎপাদনশীলতার
জন্য
সহায়ক
নীতি প্রনয়ণ করতে হবে।
Dust/Bird-dropping detection টেকনোলজিঃ
Gazipur‑এ একটি পাইলট সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে যা সৌর প্যানেলে জমে যাওয়া
ধূলা ও পাখির ড্রপিংস স্বয়ংক্রিয়ভাবে সনাক্ত করতে পারে। এটি আলো সংবেদক ও
মেশিন‑ভিশন‑ভিত্তিক AI ব্যবহার করে কাজ করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে সৌর
প্যানেল ঢেকে থাকা ৫৫% পর্যন্ত দৃশ্যমান আলো বাধাগ্রস্ত করে। weekly
পরিষ্কার ও উন্নত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যামে প্রতীক্ষিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের
প্রায় ৩% পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়ে উঠে।
৩.৫ প্রশিক্ষণ কর্মশালা
সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সোলার প্ল্যান্ট সফলভাবে পরিচালনা করা
সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে “Solar PV Design”,
“Microgrid” ও “Smart Grid” সফটওয়্যার‑ভিত্তিক কোর্স চালু হলে
ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা বাড়ে । পাশাপাশি IDCOL ও ICETR‑এর মাধ্যমে গ্রামীণ
পর্যায়ে টেকনিশিয়ানদের মাঠ‑ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হলে, সরাসরি ইনস্টলেশন,
রক্ষণাবেক্ষণ ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এতে প্রযুক্তিগত ত্রুটি
হ্রাস ও সিস্টেম আউটেজ কমে, ফলে শক্তির নির্ভরযোগ্যতা ও উৎপাদনখরচ কমে যায়।
এমন দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠলে দেশব্যাপী বড় বড় সোলার প্রকল্প দ্রুত
বাস্তবায়ন ও দীর্ঘমেয়াদি সফলতা অর্জন সম্ভব।
৩.৬ প্রশাসনিক ও নীতিগত সংস্কার
SREDA–এর অধিব্যাখ্যা শক্তিশালী করা প্রয়োজন। প্রতিটি প্রকল্পে
অডিট–ট্র্যাকিং বাধ্যতামূলক করতে হবে।সেক্ষেত্রে, প্রতিটি রিনিউএবল এনার্জি
প্রকল্পে অডিট–ট্র্যাকিং বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সবুজ শক্তির
নিরাপত্তা ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজতর হবে। ভ্যাট–ফাঁকি, কমিশন, অনিয়ম বন্ধ
করতে টেক-ড্যাশবোর্ড ও GPS–ট্র্যাকিং চালু করা যেতে পারে।
৩.৭ দুর্নীতি–প্রতিরোধ
বাংলাদেশে সোলার প্ল্যান্টে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ
প্রয়োজন। প্রথমে, বাধ্যতামূলক ওপেন টেন্ডারিং চালু করলে প্রকল্প অনুমোদন আরও
স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক হবে। পাশাপাশি, রিভার্স অকশন পদ্ধতি প্রয়োগ করা
উচিত—এতে গোপন চুক্তি ও সিন্ডিকেটিং রোধে সহায়তা পাওয়া যাবে। তৃতীয়ত, পাবলিক
মনিটরিং ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করে প্রকল্পের সব খরচ ও সিদ্ধান্ত অনলাইনে
প্রকাশের মাধ্যমে দুর্নীতি সহজেই শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এছাড়া স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ অডিট
বাধ্যতামূলক করে প্রকল্পের শুরু থেকে সম্পন্ন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ নিরীক্ষণের
আওতায় আনতে হবে। এভাবে সোলার প্রকল্পের খরচ কমবে, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ হবে,
এবং প্রকৃতিতে স্থায়ী গ্রীন Renewable Energy যাত্রা শুরু করবে।
।
৩.৮ জনসচেতনতা ও অংশগ্রহণ
ডেমোনস্ট্রেশন ক্যাম্পেইন: Door-to-door পরিচিতি ও SHS প্রয়োগে
তরুণ টেকনিশিয়ান নিয়োগ করার মাধ্যমে গ্রাহক অনাগ্রহ দূর হবে।
স্কুল/কলেজে করিকুলাম: ইনস্টলেশন দক্ষতা শেখার কোর্স চালু করা
(GreenTech event)যেতে পারে ।গ্রামীণ মসজিদ ও শ্রেণিকক্ষে ইমাম এবং শিক্ষকগণ সোলার প্লান্ট ব্যবহারের
জন্য মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে।
৪. সাম্প্রতিক উদ্দীপন
ইতোমধ্যে ইন্টারিম সরকারের নির্দেশ (২৬ জুন ২০২৫) অনুযায়ী নোবেল বিজয়ী
ডক্টর ইউনুস–এর নেতৃত্বে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ছাদে সৌর প্যানেল লাগানোর
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।এতে public institutions কে গ্রিডে সংযোজন ও
ভাড়া আয়ের সুযোগ করে দেয়া হবে; একই সঙ্গে দেশীয় চাহিদা পূর্ণে private
sector–এর বিনিয়োগ বাড়বে ।
৫. ভবিষ্যত পরিকল্পনা
বাংলাদেশের
সৌরবিদ্যুৎউৎপাদনে ২০৪১–এর
লক্ষ্যমাত্রা
২০,০০০ MW স্থির করা হয়েছে।।
তবে
রিসোর্স, নীতি, প্রযুক্তি
ও
জনমত
সমন্বয়ে
এগিয়ে
না
গেলে
তা
“ব্রিলিয়ান্ট
ড্রিম” থেকে
“আলোহীন
বাস্তবতা” হয়ে
উঠবে।
অগ্রাধিকার বিষয় সমূহ
ভূমি–দাবি
ও
উচ্চ–তারণ
নীতি
মাইক্রোফাইন্যান্স
ও
কর–সুবিধা
বৃদ্ধি
স্মার্ট–গ্রিড
ও
স্টোরেজ
ব্যবস্থা
স্থানীয়
প্রযুক্তি
উদ্ভাবন
ও
টেকনিক্যাল
শিক্ষা
প্রশাসনিক
স্বচ্ছতা
ও
দুর্নীতি–প্রতিরোধ
আমদের এই
৫টি
ক্ষেত্রেই
দৃঢ়
প্রস্তুতি
স্থাপন করতে হবে।
শেষ কথা
বাংলাদেশে আগামীর সম্ভাবনাময় একটি খাত সৌর শক্তি। অথচ
জমি–অর্থ–প্রযুক্তি–মানবসম্পদ–দুর্নীতি সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে
সমাধান না হলে এটি হবে ‘অপূরণীয় এক সম্ভাবনা’।
তবে ২০২৫–এর জুনের নির্দেশনা, স্থানীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন (ডাস্ট–বিরোধী ও
AI–ভিত্তিক), আন্তর্জাতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা একাত্ম ভাবে কাজ করলে
গ্রামে ও শহরে আলো পৌঁছাতে দেরী হবে না।
এটা আর শুধু “আলো” নয় বরং স্মার্টপ্রযুক্তি ,অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন এবং
পরিবেশবান্ধব ও স্বনির্ভর অর্থনীতি বাংলাদেশ কে এগিয়ে নিয়ে যাবে এক নতুন
উচ্চতায়।
স্মার্ট ইনফো ডেস্কের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করা হয়। নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url